Breaking News
recent

ইসলামের দৃষ্টিতে তাবিজ কবচ পর্ব-1

সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

আমাদের দেশে কতিপয় পীর-ফকির, শিক্ষিত-অশিক্ষিত অনেক সাধারণ মানুষই তাবিজ-কবচ, তাগা, কড়ি, শামুক, ঝিনুক ও গাছ-গাছালির শিকড়-বাকড় ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করেন এবং এটি বৈধ ও জায়েয মনে করেন। এ সম্পর্কে বাজারে কিছু বই-পুস্তক পাওয়া যায়, সে সব বইয়ে নির্ধারিত বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কোনো দলিল নেই, আছে কিছু মনগড়া কেচ্ছা-কাহিনী, অসংখ্য তদবিরের বর্ণনা ও তার বানোয়াট ফাজায়েল। এ সব বই পড়ে কেউ কেউ বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, রোগ-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভের আশায় বিভিন্ন তদবির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয় ও তা গ্রহণ করে। তারা এ ধরনের চিকিৎসার মূল্যায়ন ও তার বৈধতা-অবৈধতা সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। অত্র নিবন্ধের মাধ্যমে আমরা এ বিষয়টির তত্ত্ব ও স্বরূপ উদঘাটন এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তার হুকুম বর্ণনা করব।
এক. ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا فِي يَدِهِ حَلْقَةٌ مِنْ صُفْرٍ فَقَالَ: «مَا هَذِهِ الْحَلْقَةُ؟» قَالَ: هَذِهِ مِنَ الْوَاهِنَةِ. قَالَ: «انْزِعْهَا فَإِنَّهَا لَا تَزِيدُكَ إِلَّا وَهْنًا؛ فَإِنَّكَ لَوْ مِتَّ وَهِيَ عَلَيْكَ مَا أَفْلَحْتَ أَبَدًا»
“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে তামার চুড়ি দেখে বললেন, এটা কি? সে বলল: এটা ওয়াহেনার অংশ। (ওয়াহেনার অর্থ এক প্রকার হাড়, যা থেকে কেটে ছোট ছোট তাবিজ আকারে দেয়া হয়।) তিনি বললেন: এটা খুলে ফেল, কারণ এটা তোমার দুর্বলতা বাড়ানো ভিন্ন কিছুই করবে না। যদি এটা বাঁধা অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তবে কখনও তুমি সফল হবে না”।
দুই. উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
«مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً، فَلَا أَتَمَّ اللهُ لَهُ، وَمَنْ تَعَلَّقَ وَدَعَةً، فَلَا وَدَعَ اللهُ لَهُ»
“যে ব্যক্তি তাবিজ লটকালো, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে কড়ি ব্যবহার করলো, আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না”।
তিন. উকবা ইবন আমের আল-জোহানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقْبَلَ إِلَيْهِ رَهْطٌ، فَبَايَعَ تِسْعَةً وَأَمْسَكَ عَنْ وَاحِدٍ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، بَايَعْتَ تِسْعَةً وَتَرَكْتَ هَذَا؟ قَالَ: " إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيمَةً " فَأَدْخَلَ يَدَهُ فَقَطَعَهَا، فَبَايَعَهُ، وَقَالَ: " مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ»
“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। তিনি দলটির নয়জনকে বায়আত করলেন, একজনকে করলেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তার সাথে তাবিজ রয়েছে। অতঃপর তিনি স্বহস্তে তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং তাকে বায়আত করলেন, আর বললেন, যে ব্যক্তি তাবিজ ব্যবহার করল সে শির্ক করল”।
চার. একদা হুজায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক ব্যক্তির হাতে জ্বরের একটি তাগা দেখতে পেয়ে তা কেটে ফেলেন। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন : 
﴿ وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦ ﴾ [يوسف: ١٠٦]  
“তাদের অধিকাংশই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে তারা শির্ক করে।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১০৬] এ থেকে প্রমাণিত হয়, সাহাবী হুজায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মতে তাগা ব্যবহার করা শির্ক। 
পাঁচ. সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, আবু বশির আনসারি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কোনো এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী ছিলেন। সে সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, “কোনো উটের গলায় ধনুকের ছিলা অথবা বেল্ট রাখবে না, সব কেটে ফেলবে।”
ছয়. আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী জয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদিন আব্দুল্লাহ বাড়িতে এসে আমার গলায় তাগা দেখতে পান। তিনি বললেন, এটা কী? আমি বললাম, এটা পড়া তাগা। এতে আমার জন্য ঝাড়-ফুঁক দেয়া হয়েছে। তা নিয়ে তিনি কেটে ফেললেন এবং বললেন, আব্দুল্লাহর পরিবার শির্ক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«إِنَّ الرُّقَى، وَالتَّمَائِمَ، وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ»
“ঝাড়-ফুঁক, সাধারণ তাবিজ ও ভালোবাসা সৃষ্টির তাবিজ ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শির্ক”।
সাত. তাবেঈ আব্দুল্লাহ ইবন উকাইম সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
«مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا وُكِلَ إِلَيْهِ»
“যে ব্যক্তি কোনো কিছু ঝুলাবে, তাকে ঐ জিনিসের কাছেই সোপর্দ করা হবে”।
এ সব দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তাবিজ ব্যবহার করা হারাম ও শির্ক।

পোষ্টটি উপকারী মনে হলে অব্যশয় শেয়ার করবেন ।
Md Abu Raihan Siddik

Md Abu Raihan Siddik

No comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.