ঙ. যেহেতু রমযান মাসে সবাই রোযা রাখে আর রোযাদারের নেকী
অনেক বেশি। স্বয়ং আল্লাহ তাঁর ওপর খুশি হয়ে যান। আল্লাহই তাকে
পুরস্কার দেন। আর রোযাদারের জন্য
জান্নাতে একটি বিশেষ দরজা বরাদ্দ করা হবে। তাই রোযাদার মাত্রেরই
উচিত রমযান মাসে আল্লাহকে সন্তুষ্ট
করার জন্য বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী করা।
« إِنَّ فِي
الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ
فَيَقُومُون لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ
يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ».
‘জান্নাতের
একটি দরজা আছে। তাকে বলা হয় রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন
এই দরজা দিয়ে
কেবল রোযাদারগণ প্রবেশ
করবেন। তারা ছাড়া এই দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ
করতে পারবে না। বলা হবে রোযাদারগণ কোথায়
? তখন রোযাদারগণ দাঁড়িয়ে যাবেন, তাদেরকে প্রবেশের আদেশ দেওয়া হবে। রোযাদারগণ প্রবেশ
করার পর দরজাটি বন্ধ
করে দেওয়া হবে। তারপর এই দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।’ [বুখারী : ১৮৯৬; মুসলিম : ২৭৬৬]
আবূ
হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ
عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعمِائَة
ضِعْفٍ ، قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ : إِلا الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا
أَجْزِي بِهِ ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي ، لِلصَّائِمِ
فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ
وَلَخُلُوفُ فِيهِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ».
‘প্রতিটি আদম
সন্তানের নেক কাজের ফল দশগুণ হতে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি
হয়ে থাকে। আল্লাহ আয্যা
ওয়া জাল্লা বলেন, তবে
রোযাকে এর মধ্যে গণ্য করা হবে না। কারণ, রোযা
কেবল আমারই জন্য। আর
আমিই এর প্রতিদান দেব। আমার জন্য সে আহার ও যৌনচাহিদা পরিহার
করে। রোযাদারের আনন্দ
দু’টি : একটি
আনন্দ তার ইফতারের
সময়। আরেকটি আনন্দ আল্লাহর
সাথে সাক্ষাতের আনন্দ। রোযাদারের মুখের
গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চাইতেও
সুগন্ধিময়।’ [মুসলিম : ১১৫১;
তিরমিযী : ৬৫৯; নাসায়ী : ২১৮৫]
আরেকটি
হাদীসে কুদসীতে রয়েছে,
আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«قَالَ اللَّهُ
: كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي
بِهِ وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ ، وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ
، وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ ، أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ
صَائِمٌ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ
اللهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا إِذَا أَفْطَرَ
فَرِحَ ، وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ».
‘আল্লাহ বলেছেন, রোযা
ছাড়া আদম সন্তানের
প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য;
শুধু রোযা ছাড়া। কারণ, তা
আমার জন্য।
তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। রোযা
ঢাল স্বরূপ। রোযা
রাখার দিন তোমাদের কেউ
যেন অশ্লীলতায়
লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা
তার সাথে ঝগড়া করে তাহলে সে যেন বলে আমি রোযাদার। যাঁর হাতে মুহাম্মদের জীবন তাঁর শপথ! অবশ্যই
(অনাহারের দরুণ সৃষ্ট) রোযাদারের মুখের
গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের
সুগন্ধির চেয়েও সুগন্ধিময়। রোযাদারের
জন্য রয়েছে দু’টি
আনন্দের সময় : একটি হলো ইফতারের সময় আর অপরটি (কিয়ামতের দিন) তার প্রভুর
সাথে সাক্ষাতের
সময়।’ [বুখারী : ১৯০৪;
মুসলিম : ২৭৬২]
এ
মাসের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করার রয়েছে অনেক গুরুত্ব। ই‘তিকাফে বসলে ইবাদতের মওসুম
রমযানকে যথার্থভাবে কাজে
লাগানো সহজতর হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের
শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন। আব্দুল্লাহ ইবন
উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ
الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ.
‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ
দশকে ই‘তিকাফ করতেন।’ [বুখারী : ২০২৫; মুসলিম : ১১৭১; আবূ দাউদ : ২১০৯] আয়েশা রাদিআল্লাহু
আনহা থেকেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [মুসলিম : ১১৭২]
সুতরাং পবিত্র এ মাসটি ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাটানো অর্থাৎ সাওম পালন করা এবং কোনো ইবাদতগাহে একাকী নির্জনে থাকা তথা ই‘তিকাফ করা এবং ওহী নাযিলের রাত তথা
লাইলাতুল কদরে নির্ঘুম থেকে ইবাদত-বন্দেগী করা ও সিজদানবত থাকা সকল মুসলমানের কর্তব্য, যাতে আমরা নিজেদের ওপর ওই হালত ও অবস্থা সৃষ্টি করতে পারি এই সময়ে যে হালত প্রকাশিত হয়েছিল মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর ওপর। যাতে আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত নিয়ামত ও হিদায়াত থেকে আমরা পূর্ণরূপে লাভবান হতে পারি এবং হিদায়াত ও নিআমতের কথা স্মরণ করে মহান রবের শুকরিয়া আদায় করি। আমরা যেন
রমযানকে অর্থ কামাইয়ের মওসুম
না বানিয়ে ইবাদতের মওসুম
হিসেবেই গ্রহণ করি।
আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে পূর্ণ সাফল্য ও কামিয়াবীর সঙ্গে
মাহে রমযান যাপনের তাওফীক দান করুন। আমাদের সকলকে মাহে রমযানে ক্ষমা ও জাহান্নামের আগুন
থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায়
জায়গা দিন। আমীন। ইয়া রব্বাল আলামীন।

No comments:
Post a Comment