Breaking News
recent

শবে বরাত ও প্রাসংগিক কিছু কথা পর্ব-৩



প্রথম প্রশ্নঃ রাত্রি কি ভাগ্য রজনী?

উত্তরঃ না, রাত্রি ভাগ্য রজনী নয়, মূলতঃ রাত্রিকে ভাগ্য রজনী বলার পেছনে কাজ করছে সূরা আদ-দুখানের আয়াত দুটির ভূল ব্যাখ্যা। তা হলোঃ

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ* فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ –  سورة الدخان:3ـ4

আয়াতদ্বয়ের অর্থ হলোঃঅবশ্যই আমরা তা (কোরআন) এক মুবারক রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি, অবশ্যই আমরা সতর্ককারী, রাত্রিতে যাবতীয় প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়
আয়াতদ্বয়ের তাফসীরে অধিকাংশ মুফাসসির বলেনঃ আয়াত দ্বারা রমযানের লাইলাতুল ক্বাদরকেই বুঝানো হয়েছে। যে লাইলাতুল কাদরের চারটি নাম রয়েছে: . লাইলাতুল কাদর, . লাইলাতুল বারাআত, . লাইলাতুচ্ছফ, .লাইলাতুল মুবারাকাহ। শুধুমাত্র ইকরিমা (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আয়াত দ্বারা শাবানের মধ্যরাত্রিকে বুঝানো হয়েছে। এটা একটি অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা
আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আলোচ্য আয়াতেমুবারক রাত্রিবলতেলাইলাতুল ক্বাদর বুঝানো হয়েছে, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِسورةالقدر:1

আমরা কোরআনকে ক্বাদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা আল-কাদরঃ১)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ- سورة البقرة:185

রমযান এমন একটি মাস যাতে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা আলবাকারাহঃ১৮৫)
যিনি রাত্রিকে শাবানের মধ্যবর্তী রাত বলে মত প্রকাশ করেছেন, যেমনটি ইকরিমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি অনেক দূরবর্তী মত গ্রহণ করেছেন; কেননা কোরআনের সুস্পষ্ট বাণী তা রমযান মাসে বলে ঘোষণা দিয়েছে (তাফসীরে ইবনে কাসীর (/১৩৭)
অনুরূপভাবে আল্লামা শাওকানীও মত প্রকাশ করেছেন। (তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর (/৭০৯)
সুতরাং ভাগ্য রজনী হলো লাইলাতুল ক্বাদর যা রমযানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাত্রিগুলো
আর এতে করে এও সাব্যস্ত হলো যে, আয়াতের তাফসীরে ইকরিমা (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) মতভেদ করলেও তিনি শাবানের মধ্য তারিখের রাত্রিকে লাইলাতুল বারাআত নামকরণ করেননি



দ্বিতীয় প্রশ্নঃ শাবানের মধ্যরাত্রি উদযাপন করা যাবে কিনা?

উত্তরঃ শাবানের মধ্যরাত্রি পালন করার কি হুকুম নিয়ে আলেমদের মধ্যে তিনটি মত রয়েছে:
1.  এক. শাবানের মধ্য রাত্রিতে মাসজিদে জামাতের সাথে নামায অন্যান্য ইবাদত করা জায়েয প্রসিদ্ধ তাবেয়ী খালেদ ইবনে মিদান, লুকমান ইবনে আমের সুন্দর পোশাক পরে, আতর খোশবু, শুরমা মেখে মাসজিদে গিয়ে মানুষদের নিয়ে রাত্রিতে নামায আদায় করতেন মতটি ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়ীয়াহ থেকেও বর্ণিত হয়েছে (লাতায়েফুল মাআরেফ পৃঃ১৪৪) তারা তাদের মতের পক্ষে কোন দলীল পেশ করেননি আল্লামা ইবনে রাজাব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাদের মতের পক্ষে দলীল হিসাবে বলেনঃ তাদের কাছে ব্যাপারে ইসরাইলি তথা পূর্ববর্তী উম্মাতদের থেকে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছিল, সে অনুসারে তারা আমল করেছিলেন তবে পূর্বে বর্ণিত বিভিন্ন দুর্বল হাদীস তাদের দলীল হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকবে
2.  দুই. শাবানের মধ্যরাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত বন্দেগী করা জায়েয ইমাম আওযায়ী, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, এবং আল্লামা ইবনে রজব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম) মত পোষণ করেন তাদের মতের পক্ষে তারা যে সমস্ত হাদীস দ্বারা রাত্রির ফযীলত বর্ণিত হয়েছে সে সমস্ত সাধারণ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করাকে জায়েয মনে করেন
3.  তিন: ধরণের ইবাদত সম্পূর্ণরূপে বিদআতচাই তা ব্যক্তিগতভাবে হোক বা সামষ্টিকভাবে ইমামআতা ইবনে আবি রাবাহ, ইবনে আবি মুলাইকা, মদীনার ফুকাহাগণ, ইমাম মালেকের ছাত্রগণ, অন্যান্য আরো অনেকেই মত পোষণ করেছেন এমনকি ইমাম আওযায়ী যিনি শাম তথা সিরিয়াবাসীদের ইমাম বলে প্রসিদ্ধ তিনিও ধরনের ঘটা করে মাসজিদে ইবাদত পালন করাকে বিদআত বলে ঘোষণা করেছেন
তাদের মতের পক্ষে যুক্তি হলো :
  • . রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন দলীল নেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রিতে কোন সুনির্দিষ্ট ইবাদত করেছেন বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়নি অনুরূপভাবে তার কোন সাহাবী থেকেও কিছু বর্ণিত হয়নি তাবেয়ীনদের মধ্যে তিনজন ব্যতীত আর কারো থেকে বর্ণিত হয়নি আল্লামা ইবনে রজব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ শাবানের রাত্রিতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অথবা তার সাহাবাদের থেকে কোন নামায পড়া প্রমাণিত হয়নি যদিও শামদেশীয় সুনির্দিষ্ট কোন কোন তাবেয়ীন থেকে তা বর্ণিত হয়েছে (লাতায়েফুল মাআরিফঃ১৪৫) শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ রাত্রির ফযীলত বর্ণনায় কিছু দুর্বল হাদীস এসেছে যার উপর ভিত্তি করা জায়েয নেই, আর রাত্রিতে নামায আদায়ে বর্ণিত যাবতীয় হাদীসই বানোয়াট, আলেমগণ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন
  • . হাফেজ ইবনে রজব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) যিনি কোন কোন তাবেয়ীনদের থেকে রাত্রির ফযীলত রয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেনঃ সমস্ত তাবেয়ীনদের কাছে দলীল হলো যে তাদের কাছে ব্যাপারে ইসরাইলি কিছু বর্ণনা এসেছে তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, যারা রাত পালন করেছেন তাদের দলীল হলো, যে তাদের কাছে ইসরাইলি বর্ণনা এসেছে, আমাদের প্রশ্নঃ ইসরাইলি বর্ণনা উম্মাতের জন্য কিভাবে দলীল হতে পারে?
  • . যে সমস্ত তাবেয়ীনগণ থেকে রাত উদযাপনের সংবাদ এসেছে তাদের সমসাময়িক প্রখ্যাত ফুকাহা মুহাদ্দিসীনগণ তাদের সব কর্মকান্ডের নিন্দা করেছেন যারা তাদের নিন্দা করেছেন তাদের মধ্যে প্রখ্যাত হলেনঃ ইমাম আতা ইবনে আবি রাবাহ, যিনি তার যুগের সর্বশ্রেষ্ট মুফতি ছিলেন, আর যার সম্পর্কে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছিলেনঃ তোমরা আমার কাছে প্রশ্নের জন্য একত্রিত হও, অথচ তোমাদের কাছে ইবনে আবি রাবাহ রয়েছে সুতরাং যদি রাত্রি উদযাপনকারীদের পক্ষে কোন দলীল থাকত, তাহলে তারাআতা ইবনে আবি রাবাহর বিপক্ষে তা অবশ্যই পেশ করে তাদের কর্মকাণ্ডের যথার্থতা প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন, অথচ এরকম করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি
  • . পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, যে সমস্ত দুর্বল হাদীসে রাত্রির ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র সে রাত্রিতে আল্লাহর অবতীর্ণ হওয়া এবং ক্ষমা করা প্রমাণিত হয়েছে, এর বাইরে কিছুই বর্ণিত হয়নি মুলতঃ অবতীর্ণ হওয়া ক্ষমা চাওয়ার আহবান প্রতি রাতেই আল্লাহ তাআলা করে থাকেন যা সুনির্দিষ্ট কোন রাত বা রাতসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এর বাইরে দুর্বল হাদীসেও অতিরিক্ত কোন ইবাদত করার নির্দেশ নেই
  • . আর যারা রাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে আমল করা জায়েয বলে মন্তব্য করেছেন তাদের মতের পক্ষে কোন দলীল নেই, কেননা রাত্রিতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বা তার সাহাবা কারো থেকেই ব্যক্তিগত কিংবা সামষ্টিক কোন ভাবেই কোন প্রকার ইবাদত করেছেন বলে বর্ণিত হয়নি এর বিপরীতে শরীয়তের সাধারণ অনেক দলীল রাত্রিকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে, তম্মধ্যে রয়েছেঃআল্লাহ বলেনঃআজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম (সূরা আল-মায়েদাহঃ )রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাবে যা এর মধ্যে নেই, তা তার উপর নিক্ষিপ্ত হবে) (বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭)তিনি আরো বলেছেনঃ (যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করবে যার উপর আমাদের দ্বীনের মধ্যে কোন নির্দেশ নেই তা অগ্রহণযোগ্য) (মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮)শাইখ আব্দুল আজীজ ইবনে বায (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আর ইমাম আওযায়ী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) যে, রাতে ব্যক্তিগত ইবাদত করা ভাল মনে করেছেন, আর যা হাফেয ইবনে রাজাব পছন্দ করেছেন, তাদের মত অত্যন্ত আশ্চার্যজনক বরং দুর্বল; কেননা কোন কিছু যতক্ষন পর্যন্ত না শরীয়তের দলীলের মাধ্যমে জায়েয বলে সাব্যস্ত হবে ততক্ষন পর্যন্ত কোন মুসলিমের পক্ষেই দ্বীনের মধ্যে তার অনুপ্রবেশ ঘটাতে বৈধ হবে না চাই তা ব্যক্তিগতভাবে করুক বা সামষ্টিক- দলবদ্ধভাবে চাই গোপনে করুক বা প্রকাশ্য কারণ বিদআতকর্ম অস্বীকার করে এবং তা থেকে সাবধান করে যে সমস্ত প্রমাণাদি এসেছে সেগুলো সাধারণভাবে তার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে (আত্তাহযীর মিনাল বিদআঃ১৩)
  • . শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বলেনঃ সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃতোমরা জুমআর রাত্রিকে অন্যান্য রাত থেকে ক্বিয়াম/ নামাযের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না, আর জুমআর দিনকেও অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা করে রোযার জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না, তবে যদি কারো রোযার দিনে সে দিন ঘটনাচক্রে এসে যায় সেটা ভিন্ন কথা (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪৪, ১৪৮)যদি কোন রাতকে ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো তবে অবশ্যই জুমআর রাতকে ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো; কেননা জুমআর দিনের ফযীলত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে, “সুর্য যে দিনগুলোতে উদিত হয় তম্মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ট দিন, জুমআর দিন (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৪)সুতরাং যেহেতু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমআর দিনকে বিশেষভাবে ক্বিয়াম/নামাযের জন্য সুনির্দিষ্ট করা থেকে নিষেধ করেছেন সেহেতু অন্যান্য রাতগুলোতে অবশ্যই ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নেয়া জায়েয হবে না তবে যদি কোন রাত্রের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন দলীল এসে যায় তবে সেটা ভিন্ন কথা আর যেহেতু লাইলাতুল ক্বাদর এবং রমযানের রাতের ক্বিয়াম/নামায পড়া জায়েয সেহেতু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে রাতগুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট হাদীস এসেছে

To see next part of next post


Md Abu Raihan Siddik

Md Abu Raihan Siddik

No comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.