মাহে রমযানের যে রাতে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, সেই রাত্র ‘লাইলাতুল
(শবে) কদর’ নামে অভিহিত। পবিত্র কুরআনে এ প্রসঙ্গে একটি
পূর্ণ সূরাই নাযিল হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ
١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ ٢ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ
شَهۡرٖ ٣ تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ
أَمۡرٖ ٤ سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ ٥ ﴾
[القدر: ١- ٥]
‘নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে। তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে
রাতে ফেরেশতারা ও
রূহ (জিবরাইল) তাদের
রবের অনুমতিক্রমে সকল
সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই
রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’ {সূরা
আল-কদর, আয়াত : ০১-০৫}
অপর
এক সূরায় এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿حمٓ ١ وَٱلۡكِتَٰبِ ٱلۡمُبِينِ ٢ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ
فِي لَيۡلَةٖ مُّبَٰرَكَةٍۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ٣﴾
[الدخان: ١-٣]
‘হা-মীম। সুস্পষ্ট কিতাবের কসম! নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।’ {সূরা
আদ-দুখান, আয়াত : ০১-০৩}
রযমান
মাসটি হলো ইবাদতের মওসুম। এ
মাসে ইবাদতের গুরুত্ব
অনেক বেশি। নানা হাদীসে এ মাসে বিভিন্ন ইবাদতের
ছাওয়াব নানাভাবে বর্ণিত
হয়েছে। যেমন :
ক. এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হজ আদায়ের ছাওয়াব হয় এবং তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে
হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فَإِنَّ
عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً أَوْ حَجَّةً مَعِي».
‘রমযান মাসে
উমরা করা আমার সাথে হজ আদায় করার
সমতুল্য’। [বুখারী : ১৮৬৩; মুসলিম
: ১২৫৬]
উম্মে
মা‘কাল
রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عُمْرَةٌ
فِي رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً ».
‘রমযান মাসে
উমরা করা একটি হজের
সমান’। [তিরমিযী : ৮৬১]
খ. রমযানে ইবাদতে রাত্রি জাগরণের ফযীলত
বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ قَامَ
رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».
‘যে
ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকীর প্রত্যাশায় রমযানের
রাত্রি জাগরণ করবে তার অতীতের গুনাহসমূহ মাফ
করে দেওয়া হবে।’ [বুখারী : ৩৭; মুসলিম : ৭৬০; তিরমিযী : ৬১৯]
গ. রমযানের শেষ
দশকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে
ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন। আয়েশা
রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجْتَهِدُ فِي الْعَشْرِ
الأَوَاخِرِ مَا لا يَجْتَهِدُ فِي غَيْرِهِ.
‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের
শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন,
যতটা তিনি অন্য দিনগুলোতে করতেন
না।’ [মুসলিম : ১১৭৫; তিরমিযী : ৭২৬]
আয়েশা
রাদিআল্লাহু আনহা থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
إِنَّ
النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ
مِئْزَرَهُ وَأَحْيَا لَيْلَهُ وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ.
‘রমযানের শেষ
দশক এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতেন এবং
তিনি এর রাতগুলোতে নিজে
জাগতেন আর পরিবারকেও জাগাতেন।’ [বুখারী
: ২০২৪; মুসলিম : ১১৭৪; নাসায়ী
: ১৬২১]
ঘ. তাছাড়া এ মাসে মানুষকে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ للهَِ
تَبَارَكَ وَتَعَالَى عُتَقَاء فِيْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ وَإِنَّهُ لِكُلِّ
مُسْلِمٍ فِيْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ دَعْوَة مُسْتَجَابَة».
‘মাহে রমাযানে
প্রতিরাত ও দিনের বেলায় বহু মানুষকে আল্লাহ
তা‘আলা জাহান্নাম থেকে
মুক্তির ঘোষণা দিয়ে থাকেন এবং প্রতিটি রাত
ও দিনের বেলায় প্রত্যেক
মুসলিমের দু‘আ ও মুনাজাত
কবূল করা হয়ে থাকে।’ [মুসনাদ আহমদ : ৭৪৫০]

No comments:
Post a Comment