কামাল উদ্দিন মোল্লা
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ভালোবাসা ও নিষিদ্ধ প্রেম:
চারটি
অক্ষরের সমন্বয় খুব ছোট একটি শব্দ ভালোবাসা যাকে আরবি ভাষায় মুহাব্বত ও
ইংরেজী ভাষায় Love বলে। যার অর্থ হচ্ছে, অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান; যা
মানুষের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিগতভাবে দিয়ে দেন।
সাধারণত ভালোবাসা দুই ধরনের (১) বৈধ ও পবিত্র (২) অবৈধ ও অপবিত্র।
বিবাহের
পূর্বে আধুনিক যুবক-যুবতীরা যে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাকেই অবৈধ ও অপবিত্র
ভালোবাসা বা নিষিদ্ধ প্রেম বলে। আর পবিত্র ভালোবাসা বলতে আল্লাহ ও
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের
প্রতি পিতা-মাতার ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা ইত্যাদিকে বুঝায়।
আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা মাখলুক হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। অন্য
কোনো জীব জন্তুকে আমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন নি। এমনকি সর্বশ্রেষ্ঠ
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত আমাদেরকে বানিয়েছেন।
তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিৎ সর্বপ্রথম এ নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহ
তা‘আলাকে ভালোবাসা এবং আমাদের সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ ﴾ [البقرة: ١٦٥]
“যারা ঈমানদার মুমিন, তাদের অন্তরে আল্লাহর (মহব্বত) ভালোবাসা হবে সর্বাধিক প্রগাঢ়।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৫]
আর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোনো লোক পূর্ণ মুমিন হবে না
যতক্ষণ না সে নিজের জীবন এবং পরিবার পরিজনের চেয়ে আমাকে বেশী ভালোবাসবে।”
[বুখারী]
এর
দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য তথা ফরয। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে তার সুন্নত ও
আদর্শের অনুসরণ করা। আর যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সুন্নতের বেশি অনুসরণ করবে তাতে বুঝা যাবে তার অন্তরের মধ্যে রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ভালোবাসা অধিক গাঢ় এবং যারা নবীর
সুন্নতের অনুসরণ করে না, তাঁর শরী‘আত মানে না, শুধু লোক সমাজে মুখে আশেকে
রাসূল, আশেকে নবী তথা নবী প্রেমিক বলে দাবী করে, প্রকৃত পক্ষে তারা নবীকে
ভালোবাসে না। তারা শয়তান-ধোকাবাজ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরায়, সে আমার উম্মত নয়।’ [বুখারী ও মুসলিম]
আল্লাহ ও রাসূলের পরেই রয়েছে মাতা-পিতার প্রতি মহব্বতের ফযীলত। প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘সে
ব্যক্তি নিপাত যাক! সে ব্যক্তি নিপাত যাক! সে ব্যক্তি নিপাত যাক! সাহাবীগণ
আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, মাতা-পিতাকে
জীবিত পেয়েও তাদের সেবা-যত্ন করে যে জান্নাত খরিদ করে নি।’ [মুসলিম: ২৫৫১]
এ ছাড়া মাতা-পিতার দো‘আ সন্তানের জন্য অনিবার্যভাবে কবুল হয়।
স্বামী-স্ত্রীকে ভালোবাসার ফযীলত:
আল্লাহ তা‘আলা স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার ব্যাপারে বলেন,
﴿
وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا
لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١ ﴾ [الروم: ٢١]
“আর
তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে
সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জোড়া; যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং সৃজন
করেছেন তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সহমর্মিতা। নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে
সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা চিন্তা করে।” [সূরা আর-রূম: ২১]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“কোনো
মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীকে ঘৃণা করবে না, কারণ তার কোনো স্বভাব খারাপ
লাগলেও অন্য স্বভাব তাকে চমৎকৃত করবে” [বুখারী ও মুসলিম]
পোষ্টটি উপকারী মনে হলে অব্যশয় শেয়ার করবেন
No comments:
Post a Comment